কাজাখস্তানঃ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ | The largest Muslim country in the world

বন্ধুরা আজকে আমরা জানব মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশ "কাজাখস্তান" সম্পর্কে। মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ হচ্ছে কাজাখস্তান। দেশটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে তেলের খনি। কাজাখস্তানের মাটিতেই রয়েছে রাশিয়ার মহাকাশে যাওয়ার একমাত্র লঞ্চ স্টেশন। আসুন জেনে নেই "কাজাখস্তান" সম্পর্কে জানা অজানা নানান বিষয়।

Countries,Asia,Country Info,Latest,Kazakhstan,

কাজাখস্তানের সরকারি নাম "রিপাবলিক অফ কাজাখস্তান"। দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১৬ ডিসেম্ভর ১৯৯১ সালে।


কাজাখস্তানের অবস্থান মধ্য এশিয়ায়। দেশটির উত্তরে রাশিয়া, পূর্ব দিকে চীন, দক্ষিণে কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান এবং পশ্চিমে রয়েচে কাস্পিয়ান সাগর ও রাশিয়া। কাজাখস্তান প্রায় সম্পূর্ণভাবে এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত। তবে দেশটির কিয়দংশ উরাল নদীর পশ্চিমে ইউরোপ মহাদেশে পড়েছে।




কাজাখস্তানের আয়তন প্রায় ২৭ লক্ষ ২৪ হাজার ৯০০ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক দিয়ে এটি মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম ও বিশ্বের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম। এটি বিশ্বের বৃহত্তম স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। দেশটির ৭৫ শতাংশের বেশী এলাকা মরুভূমি নয়ত আধা মরুভূমি। মাত্র ১০ শতাংশ এলাকা কৃষিকাজের উপযোগী। এছাড়াও আয়তনের দিক দিয়ে কাজাখস্তান হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ।


কাজাখস্তানের বর্তমান পতাকাটি ৪ জুন ১৯৯২ সালে প্রবর্তিত হয়। দেশটির পতাকায় রয়েছে ২টি রং। আকাশী নীল এবং হলুদ রং। পতাকার মাঝে রয়েছে ৩২টি কিরণযুক্ত একটি সোনালী সূর্য, এবং তার নিচে একটি ঈগল পাখির ছবি রয়েছে। বাম দিকে জালের মতো একটি নকশা রয়েছে।


কাজাখস্তানের সরকারি ভাষা হচ্ছে "কাজাখ ভাষা"। জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ লোক কাজাখ ভাষায় কথা বলে। কাজাখ ভাষার পাশাপাশি রাশিয়ান ভাষাও সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।


কাজাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রপতি শাসিত দেশ। রাষ্ট্রপতিই  প্রধানমন্ত্রী ও বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়ে থাকেন।


কাজাখস্তান মোট ১৪ টি প্রদেশ ও ৪টি শহরে বিভক্ত। ১৪টি প্রদেশ আবার ১৭০টি জেলায় বিভক্ত। শহর চারটি হচ্ছে আলমা-আতা, বাইকননুর, শাইমকেনট এবং দেশটির রাজধানী শহর নূর-সুলতান। দেশটির আগের রাজধানী ছিল আলমাআটা। ২০১৯ সালে নূর-সুলতানকে নতুন রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। 


কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় বন্দর হচ্ছে খরগোস গেইটওয়ে। এটি ট্রান্স ইউরেশিয়ান রেলওয়ে মধ্যবর্তী বিরতির স্থান। চায়না ও ইউরোপের মধ্যে এই রেলওয়ের দূরত্ব প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার। 


কাজাখস্তানের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখের কাছাকাছি। জনসংখ্যার দিক দিয়ে কাজাখস্তান মধ্য এশিয়ার ২য় বৃহত্তম এবং বিশ্বের মধ্যে ৬৪ তম। দেশটির জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৭ জন লোকের বসবাস।


কাজাখস্তানের মোট জনসংখ্যার ৭০.২ শতাংশ মুসলিম। ২৪.৭ শতাংশ রাশিয়ান অর্থোডক্স। এছাড়াও কাজাখস্তানে রয়েছে কিছু বৌদ্ধধর্মের অনুসারী।


জাতিগত ভাগে কাজাখস্তানের ৬৩.১ শতাংশ কাজাখ, ২৩.৭ শতাংশ রুশ, ২.৮ শতাংশ উজবেক, ২.১ শতাংশ ইউক্রেনিয়ান এবং ১.১ শতাংশ জার্মান।


উমাইয়া খিলাফতের সময়েই মধ্য এশিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটে। উমাইয়া খিলাফতের সময় খোরাসানের গভর্নর কুতুইবা ইবনে মুসলিম আল বাহিল সরকারি ভাবে মধ্য এশিয়ায় ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। ৭৫০ সালে উমাইয়া খিলাফতের আভ্যন্তরীণ দন্দের কারণে উমাইয়া খিলাফতের পতন ঘটে এবং ৭৫১ সালে আব্বাসিয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা হয়।


খিলাফতের অভ্যন্তরীণ দন্দের সুযোগে তৎকালীন চাইনিজ টাং সম্রাজ্জ খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ে। ৭৫১ সালেই আব্বাসিয় খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রায় ১ লাখ সৈন্য মোতায়েন করে। তালাস নদীর তীরে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়, এই যুদ্ধে মুসলিমদের সাহায্য করে স্থানীয় কারলুক তুর্কিরা, এর ফলে  মুসলিমরা বিজয় লাভ করে। পরবর্তী ৪০০ বছর মধ্য এশিয়া ছিল ইসলামি জ্ঞানবিজ্ঞানের কেন্দ্রস্থল।


আব্বাসিয় খিলাফতের পরে এক এক করে কাজাখস্তান শাসন করে, অগুজ ইয়াবগু কিংডম, সেলজুক সম্রাজ্জ, খাওয়ারিজম সম্রাজ্জ, মঙ্গোল সম্রাজ্জ, গোল্ডেন হরডে, ত্রিমুরদিদ সম্রাজ্জ, উজবেক খানাতে, কাজাখ খানাতে, রাশিয়ান সম্রাজ্জ এবং সর্বশেষ সোভিয়েত ইউনিয়ন। 


১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় ১৬ ডিসেম্ভর কাজাখস্তানের তৎকালীন সোভিয়েত শাসক "নুরসুলতান বিশুলি নজারবায়েভ" কাজাখস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। নুরসুলতান নাজারবায়েব কাজাখস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। দীর্ঘ ২৯ বছর প্রেসিডেন্ট থাকার পরে নিজে থেকেই পদত্যাগ করেন। আর কাজাখস্তানের বর্তমান রাজধানীটিও তার নামেই নামকরণ করা হয়েছে।


গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের মতে কাজাখস্তানের সামরিক বাহিনীর রেঙ্কিং ৬৩ তম। দেশটির সামরিক বাজেট প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কাজাখস্তানের সামরিক বাহিনীর মোট সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার। রিজার্ভ সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার।


কাজাখস্তানের ডায়াল কোড +৭৭ এবং দেশটির ওয়েব কোড .kz। 


কাজাখস্তানের মুদ্রার নাম কাজাখস্তানি টেংঙ্গি। দেশটির মুদ্রার মান হচ্ছে

১ মার্কিন ডলার = ৪০০ কাজাখস্তানি টেংঙ্গি

১ বাংলাদেশি টাকা= ৪.৭১ কাজাখস্তানি টেংঙ্গি

১ ভারতীয় রুপী = ৫.২৯ কাজাখস্তানি টেংঙ্গি


কাজাখস্তানের মোট জিডিপির পরিমাণ প্রায় ১৭৯.৩৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে মোট জিডিপি ৫৬৯.৮১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশটির মাথাপিছু আয় ৯,৬৮৬ মার্কিন ডলার। ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে মাথাপিছু আয় ৩০,১৭৮ মার্কিন ডলার।


কাজাখস্তানের মোট রপ্তানির পরিমান প্রায় ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিপরীতে আমদানির পরিমাণ প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশটির বাণিজ্যিক আয়ের পরিমাণ প্রায় ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।


কাজাখস্তানের শিক্ষার হার প্রায় প্রায় ৯৯.৭৮ শতাংশ। যেখানে মেয়েদের শিক্ষার হার ৯৯.৭৪ শতাংশ আর ছেলেদের শিক্ষার হার ছিল ৯৯.৮৩ শতাংশ। 


কাজাখস্তানের দারিদ্রতার হার মাত্র ২.৫ শতাংশ। দেশটিতে বেকারত্বের হার ৭.৮ শতাংশ। বর্তমানে HDI রেংকিং এ দেশটির অবস্থান ৫০ তম।


কাজাখস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়াও দেশটিতে রয়েছে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ব্যারেল সমপরিমান তেলের রিজার্ভ। দেশটির অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অংশই হচ্ছে তেল উৎপাদন। 


কাজাখস্তানের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে রাজধানী Astana বা নুর-সুলতান, 

Almat, Aktau, Taraz, Lake Balkhash এছাড়াও রয়েছে মহাকাশে যাওয়ার লঞ্চ স্টেশন Baikonur শহর।


শুভ কামনা রইল "কাজাখস্তানের" জন্য। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশটি এগিয়ে যাক সামনের দিকে এই আশায় শেষ করছি আজকের মুসলিম দেশ পরিচিতি পর্ব। আবারও দেখা হবে আমাদের পরবর্তী মুসলিম দেশ "কিরগিস্তান" পরিচিতি পর্বে। সেই পর্যন্ত সুস্থ থাকবেন, ভাল থাকবেন আর চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকবেন। আল্লাহ্‌ হাফেজ।


0 Comments